ভাষা:
নিম্নে কতিপয় বাংলা শব্দের সাথে উপজাতীয় শব্দের সংগ্রহ তুলে ধরা হলোঃ-
বাংলা | এক | সূর্য | আকাশ | পাহাড় | নদী | পৃথিবী | মানুষ | চোখ | ভাত |
চাকমা | এক | বেল | আঘাচ | মুর | গাং | পিত্থিমী | মানুচ | চোক | ভাত |
তঞ্চঙ্গ্যা | এক | বেল | আঘাচ | মুরা | গাঙ | পিত্থিমী | মানুচ | চোক | থামং |
চট্রগ্রামের আঞ্চলিক |
এক
|
সূর্য
|
আসমান
|
কুরা
|
হাল
|
দুনিয়া
|
মানুষ
|
চোখ
|
ভাত
|
সংস্কৃতি:
এতদঞ্চলেরআদিবাসী সংস্কৃতি অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং বৈচিত্রময়। এখানকার জাতিসত্তার বিশাল সংস্কৃতির ভান্ডার রয়েছে। তারা পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতির ধারাপরম মমতায় যুগ যুগ ধরে রক্ষা করে চলেছে। আধুনিক শিক্ষা, মোঘল-ইংরেজ-বাঙালিসংস্কৃতির ছোঁয়া, নগরায়ন ও আকাশ সংস্কৃতি আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকেযথেষ্ট প্রভাবিত করেছে তা ঠিক। এতে তাদের ভাষা, পোশাক, আহার ও জীবন ধারায়পরিবর্তনও লক্ষনীয়। তা সত্ত্বেও সংস্কৃতির বিচারে তাদের এখনো আলাদাভাবেচেনা সম্ভব। এ ধারা আরো অনেকদিন অব্যাহত থাকবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। উপজাতি জনগোষ্ঠির মধ্যে বৌদ্ধ, সনাতন, খ্রিস্টান ও ক্রামা ধর্ম প্রচলিত। এখানে আচার সংস্কার বিষয়ে বেশ কিছু টোটেমিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরেরপুরহিতদের পাশাপাশি পাহাড়ি ওঝা, বৈদ্য ও তান্ত্রিকদের প্রভাবও লক্ষ করাযায়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন রীতিনীতি মেনে চলে সবাই। লোক সংস্কার ও লোকবিশ্বাসকে মনে প্রাণে ধারণ করে সেটা থেকে শুভ-অশুভকে বিচার করা হয় কখনওকখনও। তবে বর্তমানে কুসংস্কারগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
পোশাক-পরিচ্ছদও অলংকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের শিল্পমননশীলতার পরিচয়মেলে। চাকমাদের পিনন-খাদি, মারমাদের লুঙ্গি-থামি, ত্রিপুরাদের রিনাই-রিসাউৎকৃষ্ট শিল্পকলার পরিচয় বহন করে। সুদূর অতীতে মেয়েদের শুধু রূপার গহনাপরতে দেখা যেত। আবার কেউকেউ পুঁতির মালা কিংবা মুদ্রার মালা পরতো। কানে পরতো দুল আর ঝুমকো। পুরুষরা পরতো মালকোচা ধুতি এবং লম্বা হাতা জামা। বর্তমানে পেশাক-পরিচ্ছদেবেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন সকল জাতিসত্তার মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি-ব্লাউজ এবং পুরুষদের পেন্ট-শার্ট পরতে দেখা যায়।
চাকমাও তঞ্চঙ্গ্যাদের দু’টি জনপ্রিয় পালাগানের নাম হলো ‘রাধামন-ধনপুদি পালা’ও‘চাদিগাং ছারা পালা’। যুবক-যুবতীদের মধ্যে ‘উভগীদ’সবচেয়ে জনপ্রিয়। অতীতেমুহুর্মুহু রেইঙের মধ্যে সারারাত ব্যাপী গেইংখুলির পালাগান শোনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। উভগীদ গাওয়া হতো জুমে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে। ঘুমপাড়ানী গানেরনাম হচ্ছে ‘অলি ডাগনি’। বর্তমানে উপজাতীয় ভাষায় আধুনিক গান রচিত হচ্ছে। গীতিকারহিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রনজিত কুমার দেওয়ান, সুগতচাকমা, ঈশ্বর চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে‘বেহালা’, ‘দুদুক’, ‘খেংগ্রং’, ‘শিঙা’‘বাঁশি’‘ডোল’ইত্যাদি। বর্তমানে এসব যন্ত্রের ব্যবহার কদাচিত চোখে পড়ে। এসবের জায়গা দখল করে নিয়েছে কীবোর্ড, হারমোনিয়াম, তবলা, গীটার ইত্যাদি।
এখানকার পার্বত্যচট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক’। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বর্ষ বিদায় ও নববর্ষের আগমণ উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী এউৎসব পালন করে। এ বিষয়ে ‘ঐতিহ্য’নামক কনটেন্টে বর্ণনা করা হয়েছে। চাকমাদের ‘হাল পালানী’উৎসব কৃষি ভিত্তিক। এ সময় হালচাষ বন্ধ রাখা হয়ঋতুমতী জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে। চাকমাদেরজনপ্রিয় নৃত্য হচ্ছে ‘জুমনৃত্য’।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস